গত ২০২০ সালের পর কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) ফের ফার্মেসি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সাদিয়া জাহানের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত পরীক্ষার উত্তরপত্র হারিয়ে ফেলার অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়ে তদন্ত কমিটিও গঠন করলেও ওই শিক্ষক গত ১৩ এপ্রিল বিদেশ চলে যাওয়ার জন্য অনাপত্তিপত্র পেয়েছেন। যদিও একই ধরনের অনাপত্তিপত্র পেতে অন্যান্য শিক্ষকদের দেড় থেকে দুই মাসেরও বেশি সময় অপেক্ষা করা ও ভোগান্তি পোহানোর নজির রয়েছে। ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের ‘পিএইচএআরএম-২২০২: ফার্মাসিউটিক্যাল অরগানিক কেমিস্ট্রি-২’ শিরোনামের কোর্স শিক্ষক ছিলেন তিনি।
গত বছরের ৬ নভেম্বর ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের ‘পিএইচএআরএম-২২০২: ফার্মাসিউটিক্যাল অরগানিক কেমিস্ট্রি-২’ কোর্সের মানোন্নয়ন পরীক্ষা দিয়েছিলেন ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা। নিয়মিত শিক্ষার্থীদের এ কোর্সটি না থাকায় শুধুমাত্র মানোন্নয়ন দেওয়া পরীক্ষার্থীদের উত্তরপত্রগুলো পরীক্ষার পর সংশ্লিষ্ট কোর্স শিক্ষক সাদিয়া জাহানকে বুঝিয়ে দেন পরীক্ষা কমিটির সদস্যরা। তবে ওই পরীক্ষার ফলাফল তৈরি করতে গিয়ে উত্তরপত্র না পেয়ে সাদিয়া জাহানকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি উত্তরপত্র খুঁজে না পাওয়ার বিষয়টি জানান পরীক্ষা কমিটির সভাপতি জয় চন্দ্র রাজবংশীকে। এরপর তাঁর মাধ্যমেই পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বরাবর উত্তরপত্র হারিয়ে ফেলার বিষয়টি উল্লেখ করে ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানান।
উত্তরপত্র হারিয়ে ফেলার বিষয়টি স্বীকার করে সাদিয়া জাহান বলেন, উত্তরপত্রগুলো আমার কক্ষেই ছিল। মূল্যায়ন করতে গিয়ে সেগুলো খুঁজে না পেয়ে আমি পরীক্ষা কমিটির সভাপতিকে জানাই।
পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তর সাদিয়া জাহান থেকে চিঠি পেয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. এএফএম আবদুল মঈনকে জানালে তিনি তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন। রসায়ন বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. এ.কে.এম. রায়হান উদ্দিনকে আহ্বায়ক করে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। দিনক্ষণ নিশ্চিত করে বলতে না পারলেও গেল মাসের শেষের দিকে এ কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন আহ্বায়ক। তিনি বলেন, আমাদেরকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দ্রুত জমা দিতে বলেছেন।
এদিকে তদন্ত চলাকালীনই বিদেশ যাওয়ার জন্য অনাপত্তিপত্র পেয়েছেন অভিযুক্ত শিক্ষক সাদিয়া জাহান। আবেদনের পর গত বৃহস্পতিবার শেষ কার্যদিবসে তড়িঘড়ি এ চিঠি পান তিনি। শিক্ষকরা দাবি করছেন, উপাচার্যপন্থী শিক্ষকদের একটি বিষয় তদন্তাধীন থাকার পরও বিনা ভোগান্তিতে তিনি অনাপত্তিপত্র পেয়েছেন।
এসব বিষয়ে কথা বলতে উপাচার্যের মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিয়েও সাড়া পাওয়া যায়নি। উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির বলেন, পরীক্ষা সংক্রান্ত বিষয়গুলো আমার জানার কথা থাকলেও এ ব্যাপারে আমাকে কিছুই জানানো হয়নি।
এর আগে ২০২০ সালের চুড়ান্ত পরীক্ষার সবকটি উত্তরপত্র হারিয়ে ফেলার অভিযোগ ওঠে ওই বিভাগের শিক্ষক মো. আতিকুর রহমানের বিরুদ্ধে। সেসময় তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেয় ৮০ তম সিন্ডিকেট। যদিও পরবর্তীতে তাঁকে সতর্ক করেই অভিযোগ থেকে রেহাই দেওয়া হয়।